গত বছর কোচ জিনেদিন জিদানের অধীনে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন ব্রাজিলের নতুন দিনের তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। প্রথাগত ব্রাজিলিয়ানদের মতো বল পায়ে কারিকুরি করতে পারতেন ঠিকই, কিন্তু দিনশেষে সেসব করে তাঁর বা তাঁর দলের, কারওই লাভ হতো না কোনো। গোল পেতেন না নিজে, সেভাবে কাউকে দিয়ে করাতেও পারতেন না।
গোলমুখে ভিনিসিয়ুসের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে তখন অনেক কিছুই বলা হয়েছে, লেখা হয়েছে। দৃষ্টিকটুভাবে তাঁর ফর্মহীনতা ভুগিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে।
কিন্তু নতুন মৌসুমে নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তির অধীনে এ যেন এক অন্য ভিনিসিয়ুস! গোল করছেন, করাচ্ছেন সমানতালে। আর তাতে লাভ হচ্ছে রিয়ালেরই। আজ যেমন ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ভিনিসিয়ুসের কল্যাণে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
প্রথমে ১ গোল করে সমতা ফিরিয়েছেন ম্যাচে, পরে একদম শেষ মুহূর্তে করিম বেনজেমাকে দিয়ে গোল করিয়ে পুরো ৩ পয়েন্ট এনে দিয়েছেন রিয়ালকে। রিয়াল জিতেছে ২-১ গোলে।
তবে রিয়াল যে সব মিলিয়ে ভালো খেলেছে, বলা যাবে না। রক্ষণের দিক দিয়ে, আক্রমণ গড়ে তোলার দিক দিয়ে এখনো বেশ কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে দলটার। কিন্তু বেনজেমা ও ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্ত ফর্মের কাছে সবকিছুই ফিকে হয়ে পড়েছে।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গত পাঁচ ম্যাচে ৬ গোল আর ৫টি গোলে সহায়তা করেছেন করিম বেনজেমা। রোনালদো যাওয়ার পর কয়েক মৌসুম ধরে রিয়াল আক্রমণভাগের নেতা কেন তাঁকে বলা হয়, সেটার প্রমাণই যেন এই পরিসংখ্যান।
অনেকটা ৪-৪-১-১ ছকে নেমেছিল আজ রিয়াল। চার ডিফেন্ডারের সামনে মদরিচ, কাসেমিরো, ভালভার্দে ও ভিনিসিয়ুসের মাঝমাঠ, ওদিকে বেনজেমার পেছনে স্বাধীনভাবে আক্রমণ করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল এদেন হ্যাজার্ডকে। শেষে দলে নতুন আসা ফরাসি মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা নেমে আবারও দুর্দান্ত খেলেছেন। বুঝিয়েছেন, তাঁকে বেশিদিন বেঞ্চে বসিয়ে রাখতে পারবেন না কোচ আনচেলত্তি।
৬৬ মিনিটে স্প্যানিশ উইঙ্গার হুগো দুরোর গোলে এগিয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া। ভুলটা রিয়ালের রক্ষণভাগেরই ছিল। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা এক ক্রস সামলাতে পারেননি দানি কারভাহালের বদলে মাঠে নামা লুকাস ভাসকেজ। হেড করে বল দিয়ে দেন ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা দুরোর কাছে। বাঁ পায়ের দুর্দনাত ভলিতে গোল করতে সমস্যা হয়নি এই উইঙ্গারের।
শেষের পাঁচ মিনিটেই হিসাব বদলে দেয় রিয়াল। ৮৬ মিনিটে বেনজেমার সহায়তায় গোল করেন ভিনিসিয়ুস, দুই মিনিট পরে ভিনিসিয়ুসের সহায়তায় গোল আসে বেনজেমার পা থেকে। পুরো ৩ পয়েন্ট তো রিয়ালের পাওয়া হয়ই, উল্টো লিগের শীর্ষেও উঠে যায় তারা।
এই নিয়ে টানা পাঁচ লিগ ম্যাচে ৫ গোল হয়ে গেল ভিনিসিয়ুসের, রিয়ালের হয়ে আগের ৫ গোল করতে যে ভিনিসিয়ুস ৫৯ ম্যাচ সময় নিয়েছিলেন। ব্রাজিলিয়ান সুবাস অবশেষে পাওয়া শুরু করেছে রিয়াল!