গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ঘুরছেন গোলাপি বোরকা পরিহিত এক নারী। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুকে সেফটিপিনে লাগানো ব্যাচ দেখিয়ে নিজের জন্য ভোট চাইছেন। ভোটারদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বললেও মুখে অল্প কিছু বাংলা শব্দের বুলি ছড়াচ্ছেন তিনি—‘চাচি, আমি জুলহাসের বউ, আমার মারকা (মার্কা) মাইক। আমারে একঠা ভোট দিবেন।’ বেশ কিছুক্ষণ তাঁর পিছু নিয়ে জানা গেল তিনি বিদেশি। গ্রামে সবার কাছে তিনি ‘বিদেশি বউ’ বলে পরিচিত।
এবার দ্বিতীয় ধাপে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ফিলিপাইনের এই নারী—জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার জুলহাস। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১১ নম্বর রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মাইক প্রতীক নিয়ে।
১১ নভেম্বর সকাল আটটা থেকে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ভোট গণনা শেষে জেসমিন আক্তার ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোছা. শিমু আক্তার বক প্রতীক নিয়ে ভোট পান ১ হাজার ৮৩৭টি।
গ্রামে বেরোলেই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও জেসমিন আক্তারকে দেখার জন্য আসছেন। তাঁর মুখে ইংরেজি কথা শুনে অনেকেই আনন্দ পাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে কিছু কিছু বাংলা শব্দ বলতে শিখে গেছেন জেসমিন আক্তার। এ ছাড়া তাঁর স্বামী জুলহাস মিয়া দোভাষী হিসেবে সাধারণ মানুষের কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন জেসমিন আক্তারকে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১১ নম্বর রাধাকানাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দবরদস্তা গ্রামের আবদুস সামাদ মণ্ডলের ছেলে জুলহাস মিয়া। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর একই কোম্পানিতে চাকরিরত ফিলিপাইনের নাগরিক জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে পরিচয় হয়। দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবনে তাঁদের মধ্যে সেই পরিচয় ভালোবাসায় গড়ায়। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা তাঁর নিজ দেশ ফিলিপাইনে চলে যান। অন্যদিকে, জুলহাস মিয়াও বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু তাঁরা প্রেমের সম্পর্ক ঠিক রাখাতে মুঠোফোনে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যান।
বাড়িতে এসে মন টেকেনা জুলহাসের। মনটা পড়ে থাকে তাঁর প্রিয়তমার কাছে। পরে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা জুলহাস মিয়াকে বিয়ে করবেন—এমন শর্তে ফিলিপাইনে আসতে বলেন প্রেমিক জুলহাসকে। জুলহাস মিয়া প্রেমের টানে ফিলিপাইনে গিয়ে জিনের পারিবারিক সম্মতিক্রমে বিয়ের সব আয়োজন ঠিক করেন। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে সংশ্লিষ্ট বিয়ের আয়োজকেরা বলেন, দুজন দুই ধর্মের, সংসারজীবনে অশান্তি তৈরি হতে পারে। তাই দুজনের যেকোনো একজনকে তাঁর ধর্ম ছেড়ে আসতে হবে।